ইতালি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জানুন
ইতালি কে বলা হয়ে থাকে স্বপ্নের দেশ। পৃথিবীর মানবসভ্যতার ইতিহাসে ইতালি তার পরিচয় দিয়েছে শুধু রোমান সাম্রাজ্যের জন্য নয়, প্রাচীনকালে তার শিল্প ও বিজ্ঞান চর্চার প্রভাব আজও পৃথিবীতে রয়েছে এবং যতদিন মানুষ থাকবে তাকে অস্বীকার করা সম্ভব হবে না। যে দেশে বিখ্যাত শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এবং মাইকেলেঞ্জেলো জন্মেছেন তার প্রমাণ মোনালিসার ছবি এখনো দিয়ে যাচ্ছে। যা লিওনার্দো দা ভিঞ্চির তৈরী। আর দূরের গ্রহ-নক্ষত্রকে কাছে থেকে দেখার জন্য যে যন্ত্র টি ব্যবহার হয়ে থাকে এবং তার পিছনে যে মানুষটার অবদান আমরা চিরকাল মনে রাখব সেই গ্যালিলিও গ্যালিলির জন্ম এই ইটালিতে। মহাকাশ বিজ্ঞানে ব্যবহৃত টেলিস্কোপ এর উন্নতির পিছনে তার যেটুকু অবদান রয়েছে তা আজও সাধারন মানুষ তথা বিজ্ঞানীদের কাছে অকল্পনীয়। ইটালির প্রতিটা কোণা তার ঐতিহ্য এবং শিল্প কারুকার্জ এর জন্য বিখ্যাত। তো চলুন স্বপ্নের দেশ ইতালি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নিই ।
ইটালি শব্দ টি এসেছে ইতালিয়া থেকে। এর অর্থ হলো ল্যান্ড অফ কাবস্। সম্ভবত প্রাচীন দক্ষিণের ইতালিয় উপজাতিদের প্রতীক ছিল ষাঁড়। আসলে ইতালির বর্তমানের দক্ষিণ দিক টাকে ইটালিয়া নামে ডাকা হতো। যা পরে গ্রিক রা আরো বেশি জায়গাকে জুড়ে এই নামে ডাকতে শুরু করে।
ইতালির মোট আয়তন 3 লক্ষ 1 হাজার 340 বর্গকিলোমিটার এবং দেশের চারিদিকে রয়েছে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেিয়া, স্লোভানিয়া এবং ভূমধ্য সাগরের কিছু দ্বীপ রয়েছে।
ইটালি জনসংখ্যার দিক দিয়ে বর্তমানে 23 তম এবং 2018 অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার 6 কোটি 4 লক্ষ 36 হাজার 469 জন। আর দেশের প্রতি বর্গকিলোমিটার জায়গায় 201 জন মানুষ বসবাস করে।
ইটালিয়ান ভাষা এদেশের আধিকারিক ভাষা এবং দেশের নাগরিক দের ইতালিয়ান বলে। এই দেশের জনবহুল এথনিক গোষ্ঠীও ইতালিয়ান।
ইতালিতে খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ বেশি থাকে। 2012 সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে প্রায় 83.3 শতাংশ খ্রিস্টান মানুষ বসবাস করে।
ইতালির জাতীয় মুদ্রা ইউরো । 1 ইউরো প্রায় 78 টাকার সমান।
6 থেকে 16 বছর বয়সে ইতালিতে পড়াশোনা বিনামূল্যে করানো হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা অবশ্যই দেশটার বেশি। কারণ যে দেশে ইউনিভার্সিটি অফ বলোগ্না রয়েছে, যাকে পৃথিবীর এক প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে ধরা হয়। আর দেশের শিক্ষিতের হার 99.2 শতাংশ।
PO নদী ইতালির দীর্ঘতম নদী। যার দৈর্ঘ্য 652 কিলোমিটার। ইটালির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মন্ট ব্লাঙ্ক। আল্পস পর্বতমালার অন্তর্গত এর উচ্চতা 4808.7 মিটার। ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত সক্রিয় কিছু আগ্নেয়গিরির মধ্যে কয়েকটা ইতালিতে আছে। যাদের মধ্যে সবথেকে বিপদজ্জনক হিসেবে পরিচিত ভেসুভিয়াস। ভেসুভিয়াস বেশি সক্রিয় এবং বিপদজনক এই কারণে যে এর আগে সে নিজের ধ্বংসলীলা দেখিয়েছে। আর এই সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আশপাশে রয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষের বসতি। দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী তাইবার নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন শহর রোম। রোম শহর ইতালি এবং তার এক প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও রাজধানী। রোমের ইতিহাস কয়েক শতাব্দীর। যেখানে প্রাচীন বাড়িঘর এবং ভাস্কর্য পৃথিবীর আশ্চর্য নির্মাণে মধ্যে গণ্য হয়। একসময় রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল রোম।
তাই ঐতিহাসিকদের মতে রোম শহরকে পাশ্চাত্য সভ্যতার জন্মস্থান রূপে আখ্যা দেওয়া হয়। আবার পৃথিবীর আদিম কালে নিয়মিত বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর রোম।এই রোম শহরের মধ্যেই রয়েছে পৃথিবীর সব থেকে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি। রোমের অনেক গুলি নাম কয়েকজন বিশিষ্ট জনেরা দিয়েছেন যেমন কাপিটাল অফ দা ওয়ার্ল্ড, দ্য ইটার্নাল সিটি ইত্যাদি। ভ্যাটিকান সিটির উপস্থিত এবং রোমের পুরাতন কারুকার্য গুলি এখন পর্যটকদের জন্য সবসময় ব্যস্ত থাকে। এই সমস্ত কারণে গ্লোবাল সিটির জন্য উপযুক্ত স্ট্যাটাস রোম শহরকে দেওয়া হয়েছে।
আরেকটা বিখ্যাত শহর ভেনিস এই ইতালিতেই অবস্থিত। প্রায় 120 টা ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই শহর। আর এই ছোট ছোট দ্বীপ গুলি কে যুক্ত করেছে 400 টির মতো ছোটো ছোটো ব্রিজ। দ্বীপ গুলির মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্যানেল গুলির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় বোঝা যায় এই শহরের সৌন্দর্যটা। তাই সিনেমাতে প্রায়ই এই শহরের ঝলক আমরা দেখতে পাই। ভেনিস নামের উৎপত্তি ভেনেটি নামের এক প্রাচীন মানুষদের থেকে। যারা এই জায়গায় বসবাস করতো।
একসময় শিল্পীদের প্রাণ কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত এই ভেনিস শহর শিল্প কার্যের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। একসময় ভেনিস ইউরোপের ক্যাপিটাল অফ পৃন্টিং বলেও পরিচিত ছিল। সেখানে অসাধারণ কাঁচের কারুকার্যের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই ভেনিস শহর টি পরিচিত ছিল।
টিভিতে বা বিভিন্ন ম্যাগাজিনে ইতালির খাবারের চর্চা আমরা প্রায়ই দেখে থাকি। তাই তারা তাদের খাবারের জন্য গর্বিত। তারা মনে করে যে ইউরোপিয়ানদের তারাই নাকি রান্না শিখিয়েছে। আবার তারা এটাও দাবি করে যে চীনাদের মাধ্যমে আইসক্রিমের সঙ্গে ও কফির সঙ্গে বিশ্ব কে পরিচয় করিয়ে দেবার কৃতিত্ব টাও তাদেরই। আবার ফ্রেঞ্চ ফ্রাইচ বানানো নাকি ইটালিয়ান রা শিখিয়েছে। ভালো খাবারের সঙ্গে পরিচয় ইটালিয়ান রা অনেক আগেই পেয়েছে। পারমেশন চিজ প্রথম তৈরি হয় পার্মা তে, যা ইতালি তে অবস্থিত। ইতালিয়ান পিজ্জা এবং পাস্তা এগুলি সারা বিশ্বেরই পছন্দের খাবার।
বিশ্বের প্রথম সারির উন্নত অর্থনীতির সম্পন্নদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং গাড়ি এবং নানারকম জিনিসের উৎপাদনের জন্য ইতালি পরিচিত। নামকরা গাড়ির কোম্পানি যেমন ল্যাম্বরগিনি, ফেরারির হেডকোয়ার্টারও ইতালিতে অবস্থিত।
ইটালি তে অপরাধের মাত্রা অনেক বেশি। তাই এই অপরাধীরা দেশের অর্থনীতিতে বিভিন্ন ভাবে প্রভাব ফেলে। দুবাইয়ের মতো ইটালির পুলিশও তাদের দামি গাড়ির ব্যবহারের জন্য জনপ্রিয়। বিশ্বের দামি দামি গাড়ির কোম্পানি যেমন ল্যাম্বরগিনির গাড়ি এখানকার পুলিশ ফোর্স ব্যবহার করে।
ইতালির আরও একটা শহর মিলান তার ফ্যাশন এবং ডিজাইনের জন্য প্রসিদ্ধ। তাই একে আবার বিশ্বের ফ্যাশন এবং ডিজাইন ক্যাপিটাল বলা হয়। তবে এই শহরের পরিচয় ফুটবলের জন্যও আছে। নামকরা সব ফুটবলের মাঠ এবং ফুটবল দল যেমন ইন্টার মিলান, এসি মিলান এই শহরের।
আর ফুটবল এবং ইটালি এই দুটোকে আলাদা করা কঠিন এখানকার মানুষের প্রিয় খেলা ফুটবল। তাই ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল গুলির তালিকায় ইতালি নেশনাল ফুটবল টিম আছে। যদিও 2018 বিশ্বকাপে ইতালি কোয়ালিফাই করতে পারেনি, তবুও ইতালির সফলতার গল্প অতীতকালের মতো ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে।
ইতালির একটি শহরে জ্যান্ত মানুষ দিয়ে দাবা খেলা হয়। মানুষ দিয়ে দাবা খেলার জন্য শহরটা জনপ্রিয়। এই খেলা কয়েক শ বছরের পুরনো।
2000 সালের দিকে বিশ্বের দ্বিতীয় সব থেকে ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য ইতালি বিখ্যাত ছিলো। ফলে ইতালিতে মেয়েদের সম্ভাব্য আয়ুকাল 85 বছর এবং ছেলেদের 80 বছর । কিন্তু বর্তমানে যে সারা বিশ্বে মহামারী করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে উন্নত চিকিৎসা ব্যাবস্থা থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত সবচেয়ে মানুষ বেশি মারা গিয়েছে এই ইতালি তে ।